মিজান বলত, ‘আমাকে ১০টি বছর ফিরিয়ে দিন’
এক
হঠাৎ কখনো-সখনো মিজান, আমাদের মিজানুর রহমান খান, আমাকে বলত, ‘মতি ভাই, আমার ১০টি বছর ফিরিয়ে দিন।’ সে বলত, সে নাকি ১৯৯৫ সালে ভোরের কাগজ-এ আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিল। আমার কাছেও এসেছিল তখন। তার ১০ বছর পর, ২০০৫ সালের নভেম্বরে মিজান প্রথম আলোতে যোগ দিয়েছিল। পরের ১৫ বছরে প্রথম আলোর সাংবাদিকতার নানা কাজ ও বহুমুখী উদ্যোগে যুক্ত ছিল বহুদিন। তার সঙ্গে কথা বা আলোচনায় বহু সময় কেটেছে আমাদের। কখনো কখনো অতীত-বর্তমানের রাজনীতি, সমাজ বা নিতান্তই কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় মেতে উঠতাম আমরা। অনেক সময় তার লেখার নানা বিষয় বা সাক্ষাৎকার নিয়ে আলোচনা করতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সেসব হতো হয় অফিসে বা আমার বাসায়।
বিগত ১৫ বছরে প্রথম আলোতে অতি গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক হয়ে উঠেছিল মিজান। সে এতটাই অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল যে তাকে ছাড়া আমাদের অনেক কিছুই হতো না, হতে পারত না। আমি বলতে পারি যে ভবিষ্যতেও তার অনুপস্থিতিতে অনেক কিছুই হবে না প্রথম আলোতে। অনেক কিছুই করতে পারব না আমরা।
দুই
মিজানুর রহমান খান ছিল দিনরাত ২৪ ঘণ্টার সাংবাদিক। বিরল অনুসন্ধানী এক মন ছিল তার। যেকোনো বিষয়ে গভীরে যাওয়ার এবং কঠিন পরিশ্রম করার মানসিকতা ও ক্ষমতা তার ছিল। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে আদালত, বিচারব্যবস্থা ও সংবিধান বিষয়ে সে নিজেকে একজন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছিল। রাজনীতি, অপরাধ বা অন্য আরও সাংবাদিকতার বিষয়ে পৌঁছে গিয়েছিল আলাদা উচ্চতায়। এসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি করার মধ্য দিয়ে সারা দেশের জেলা ও সুপ্রিম কোর্ট পর্যায়ের আইনজীবী এবং বিচারক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তার যোগাযোগ ও যাতায়াত। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে মিজানের জানাজায় বর্তমান ও সাবেক বিচারপতি এবং আইনজীবীদের বড় উপস্থিতিতে এটা বোঝা গেল।
সকাল-দুপুর-গভীর রাত—সব সময় কাজের মধ্যে ডুবে থাকার সহজাত প্রবণতা ছিল মিজানের। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে দেশ-বিদেশের জানা-অজানা কত মানুষ—বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সখ্য গড়ে তুলেছিল মিজান। এসব নানামুখী প্রচেষ্টা থেকে প্রথম আলো বহুভাবে উপকৃত হয়েছে।
তিন
মিজানুর রহমান খান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ছিল। তার কাজের ক্ষেত্র ছিল সম্পাদকীয় বিভাগ। সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় লেখাই ছিল মূল কাজ। কিন্তু সাংবাদিকতায় সে নিজেকে সেই গণ্ডিতে আটকে রাখতে আগ্রহী ছিল না মোটেই। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে ছবি তুলত, ভিডিও করত। কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার মোড়ে একটি অবিশ্বাস্য ছবি তার তোলা। কলেজছাত্র রাজীব হোসেনের দুই বাসের ফাঁকে আটকে পড়ে বিচ্ছিন্ন হওয়া ডান হাতের সেই ছবি ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছিল।
করোনাকালে সরেজমিনে সারা রাত হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে এসে লিখল ‘শিশু সুমা: রুগ্ণ স্বাস্থ্যব্যবস্থার অসহায় বলি’। সেটি ছাপা হলো গত বছরের ১৯ মে তারিখের প্রথম আলোতে। সুমা নামের ১ মাস ২৮ দিন বয়সী এক শিশুর জন্মের পরই ‘হার্টের সমস্যা’ দেখা দেয়। শ্বাসকষ্ট বাড়লে তাকে শিশু হাসপাতালে আনা হয়। আট হাজার টাকার মতো খরচ করে তিন-চার রকম টেস্ট করানো হয়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন শিশুটিকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কারণ, তাকে আইসিইউতে রাখতে হবে। শিশু হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। ১৬ মে বিকেল থেকে পরদিন ভোর চারটায় শিশুটির মৃত্যু পর্যন্ত রোগী ও তার পরিবারের সঙ্গে থেকে সে লিখেছিল অনুসন্ধানী সেই মানবিক রিপোর্ট। এমন একটি বিশেষ কাজ শুধু মিজানুর রহমান খানই করতে পারে। ছবি তোলাসহ এই রিপোর্টের ভিডিও করেছিল মিজান নিজেই।
করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বাসা থেকে ২ ডিসেম্বর একটি উপসম্পাদকীয় লিখে পাঠিয়েছিল, সাংসদ আসলামুল হকের নদী দখল নিয়ে, ‘খালখেকোর সাজা যখন সিগারেটখেকোর সমান’। সেটা পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল ৩ ডিসেম্বর। আর ৪ ডিসেম্বর বাসা থেকে লিখে পাঠাল সম্পাদকীয় ‘যাবজ্জীবন সাজার ব্যাখ্যা’। সেটা প্রকাশিত হয় ৯ ডিসেম্বর। এটা তো অবিশ্বাস্য যে হাসপাতাল থেকেও প্রথম আলোর জন্য একটি নতুন অনুসন্ধানী লেখা মিজান তৈরি করেছিল। সেটি ঠিকঠাক করে আমাকে পাঠাল ৬ ডিসেম্বর, সে তখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমরা ১৭ ডিসেম্বরের প্রথম আলোর ৫-এর পৃষ্ঠায় সেটি ছেপেছিলাম। শিরোনাম ‘মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন গোয়েন্দা ব্যর্থতা’। মুক্তিযুদ্ধের অজানা ইতিহাস উঠে এসেছিল মার্কিন গোপন এই নথি থেকে।
আসলে মিজান লিখত প্রচুর। লেখার বিষয় নিয়ে ভাবত আরও বেশি। কথাও বলত অনেক। যতক্ষণ জেগে থাকত, সাংবাদিকতা-সংবাদপত্র নিয়ে থাকত। যখন ঘুমাত, তখনো হয়তো সংবাদ বা প্রথম আলো থাকত তার স্বপ্নে।
চার
সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লেখা ছাড়াও গভীর অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণমূলক রিপোর্ট করত, বিশেষ বড় বড় সাক্ষাৎকার নিত এবং অনুবাদ করত অনেক কিছু। যেকোনো সময় এক-দেড় হাজার শব্দ লিখে ফেলতে পারত। এমনও হয়েছে যে হঠাৎ কোনো রাতে একটা বিশ্লেষণ প্রথম পাতায় ছাপতে হবে—বলামাত্রই উৎসাহের সঙ্গে লেখা নিয়ে এসে হাসিমুখে দাঁড়াত। লিখতে আনন্দ পেত সে। লেখা ছাপা হলে খুশি হতো। নিয়মিত লেগে থাকত নতুন নতুন বিষয়ের পেছনে। তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হিসাববিজ্ঞানে হলেও সাংবাদিকতাই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা। বরিশালে থাকতেই সে দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল নামের একটি পত্রিকায় কাজ করত। এরপর দৈনিক খবর, বাংলাবাজার, নিউ নেশন, মানবজমিন, মুক্তকণ্ঠ, যুগান্তর, সমকালসহ অনেক পত্রিকায় কাজ করেছে।
মিজানুর রহমান খান ছিল একজন সহজ-সরল, হাসিখুশি মানুষ। প্রচণ্ড প্রাণবন্ত ও সাহসী ছিল। বন্ধুত্ব বা সহমর্মিতা প্রদর্শনেও পিছিয়ে ছিল না কখনো। এত চিন্তা, কাজ, ভাবনার বিস্তৃত জগৎ, লেখালেখি—এসব নিয়ে অনেক মজার ঘটনা আছে। কখনো কখনো তর্ক-বিতর্কও হয়েছে। তারপরও এটাই সত্য যে একজীবনে মানুষ সব করে উঠতে পারে না।
সংবাদ ও সংবাদপত্রের কাজকে কত যে ভালোবাসত মিজান! নানা মহলে যোগাযোগ শেষে দিনের আলোচনা, রাতের টক শো, নিজের লেখালেখি এবং গভীর রাতে পড়াশোনা—জানি না, এরপর স্ত্রী-সন্তানকে কতটাই আর সময় দিতে পারত! শুধু জানি, মিজান তাদের খুব ভালোবাসত। তাদের পাশে থাকতে চাইত। তিন সন্তান—প্রথম সন্তান শাদমান, আইনের ছাত্র; কন্যা আফসারা, স্থাপত্য বিষয়ে পড়ছে এবং স্কুলছাত্র আনানের পড়াশোনা নিয়ে ভাবত। তাদের নিয়ে সে খুব গর্ববোধ করত। আমাদের সামনে এনে হাজির করত তাদের। মিজানের স্ত্রী আনজিনা শিরিন শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বেশ কিছুটা সময়। ঢাকার অনেক ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে গেছে তাঁকে নিয়ে। জার্মানি, ইতালি—কত জায়গায় গেছে!
মিজানের যেদিন মৃত্যু হলো, সেদিন রাতে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম যে তারাও তার সঙ্গে অনেক রাত জেগে থাকত। কত আনন্দ–স্মৃতির কথা বলল তারা গভীর বেদনা নিয়ে।
পাঁচ
সব সময় কাজ, বড় কাজ করতে চাইত মিজান। আমার তো কিছু বিষয়ে আগ্রহের শেষ নেই। যেমন ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বা ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ সব সময়ে সদা জাগ্রত। এসব বিষয়ে মিজানও আমার সঙ্গে যুক্ত হতো, কথা বলত। এসব করতে করতে খোঁজখবর নিয়ে একবার আগ্রহ প্রকাশ করল, ওয়াশিংটন ডিসির লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে গিয়ে কাজ করবে। আমার পেছনে লেগেই থাকল। তারপর ওয়াশিংটন ডিসিতেও গেল। এক মাসের জায়গায় দুই মাস বা তারও বেশি সময় থাকল। অনেক তথ্য, দলিল আর নথিপত্র সংগ্রহ করে আনল। ঢাকায় ফিরে সেসব নিয়ে গভীর লেখালেখি শুরু করল। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোতে বছরের পর বছর লিখেছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা তার জীবনের ব্রত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় প্রতিবছরই কিছু না কিছু নতুন তথ্য খুঁজে খুঁজে বের করত।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা জায়গা থেকে তথ্য, নথি ও বই সংগ্রহ করত মিজান। তার এমন নানান লেখালেখি থেকে ২০১৩ সালে প্রথমা প্রকাশন থেকে আমরা প্রকাশ করি মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে সিআইএ কিংবা কিসিঞ্জার প্রশাসনের কতটা ভূমিকা ছিল, পঁচাত্তরের অভ্যুত্থানের চক্রান্তের সূচনা ঠিক কখন, কখন তার শেষ, এসব বিষয়ে খোদ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও সিআইএর দলিল কী বলে—এমন দারুণ সব বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বই। বইটির নয়টি মুদ্রণ বের হয়েছে এখন পর্যন্ত। এ বিষয়ে কাজের আরও আগ্রহ ছিল তার। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পটভূমি এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে এর অভিযাত্রা নিয়ে লেখা ড. কামাল হোসেনের একটি বইয়ের অনুবাদ করেছে সে—বাংলাদেশ: স্বাধীনতা ও ন্যায়ের সন্ধানে। বইটি গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করে প্রথমা।
ছয়
মনে পড়ে, চার বছর আগে এক মিথ্যা মামলার কারণে আমাকে ঝালকাঠির আদালতে হাজির হতে হয়। ঝালকাঠি মিজানের পৈতৃক বাড়ি। সব কাজ শেষে ঢাকার পথে রওনা হই লঞ্চে। লঞ্চ যখন প্রথম ঘাটে ভিড়ল, দেখি মিজানেরই একজন ভাই দৌড়ে বড় এক টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে হাজির। মিজান ঢাকাতেই ছিল। সে ফোন করে তার মাকে আমার কথা বলেছিল। তার মা ভাত-মাছসহ নানা খাবার পাঠিয়েছিলেন টিফিন ক্যারিয়ার ভর্তি করে। যতবার আমি মামলা-মোকদ্দমায় জজকোর্ট, হাইকোর্টে দৌড়াদৌড়ি করেছি, সে সর্বক্ষণ খোঁজ রেখেছে, পাশে থেকেছে। এমনকি সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরের মামলা নিয়েও আইনজীবীর কাছে যাওয়া, কোর্টে থাকা, খোঁজ নেওয়াসহ পাশে থেকেছে নানাভাবে। এসব কোনো দিন ভুলতে পারব না।
এ ছাড়া একাধিক মামলায় আমরা একসঙ্গে বিচারকের সম্মুখীন হয়েছি। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চ ও আপিল বিভাগের সামনেও হাজির হতে হয়েছে। আমাদের পাশে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী যাঁরা ছিলেন, মিজানের মৃত্যুর পরপরই তাঁদের মধ্যে কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম ও শাহদীন মালিক ফোন করে গভীর শোক জানিয়েছেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মেসেজে লিখেছেন, অসহ্য লাগছে, মেনে নিতে পারছি না। সাংবাদিক, লেখক-বুদ্ধিজীবীসহ বাংলাদেশের বিশিষ্ট মানুষেরা তার মৃত্যুতে ব্যথিত হয়েছেন, সমবেদনা জানিয়েছেন।
আসলে মিজানুর রহমান খানের মতো একজন সরল, আন্তরিক মানুষ বিরল। আমাদের জীবনে এমন একজন সাংবাদিকের দেখা পাওয়া বড় সৌভাগ্যের বিষয়। এখন তো অনেক সংবাদপত্র, অনলাইন পত্রিকা বা পোর্টাল, টেলিভিশন; কিন্তু এমন পরিশ্রমী, সৎ সাংবাদিক কজন আছে? মিজানুর রহমান খান সততা ও নিষ্ঠার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। সব শ্রেণির মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিল প্রিয়। এই বিভক্ত রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায়ও সব মহলে ভালোবাসা পাওয়ার পেছনে তার এই সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমই কাজ করেছে।
সাত
আসলে একটি সফল সংবাদপত্র, সংবাদমাধ্যম বা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে বহু ধরনের, বহুমুখী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। সে জন্য বহু মানুষের যৌথ বা সমবেত নিরলস পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। সেখানে মিজানুর রহমান খানের মতো মানুষের বড় ভূমিকা থাকে। আমরা সবাই এক রকম হই না। এ সবকিছুর মধ্যেও কেউ কেউ নিজের কাজ ও নিষ্ঠায় ব্যতিক্রম হয়ে ওঠে। মানুষের ভালোবাসা পায়। সে সামনে না থাকলেও মানুষ মনে রাখে। প্রথম আলোও মিজানকে সব সময় মনে রাখবে।
এক মাস ধরে তাকে নিয়ে আমরা ভয়ে ছিলাম। প্রথম আলো পরিবারের, আমাদের ডাক্তার বন্ধুদের এবং মিজানের পরিবারের সবার সম্মিলিত চেষ্টা সত্ত্বেও সবাইকে বিদায় বলে চলে গেল মিজান। ৫৩ বছরের জীবন মিজানের। সে অকালে চলে গেল, আর আমরা রয়ে গেলাম।
মিজান, তুমি বলেছিলে, ‘আমাকে ১০টি বছর ফিরিয়ে দিন।’ এখন আমি বারবার বলি, মিজান, ১০টি নয়, আরও ২০টি বছর দিতে চেয়েছিলাম তোমাকে। আমার তো চলে যাওয়ার সময় হয়েছিল। কিন্তু মিজান, কোনো কথা না বলে তুমি চলে গেলে! আমরা এখন এই বেদনার ভার বহন করব কীভাবে?